ঢাকা ভার্সিটি হতে WES EVALUATION এর জন্য ডকুমেন্ট পাঠানোর নিয়ম

যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা এর অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করেছেন, তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট WES থেকে EVALUATE করাতে হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্তৃক সত্যায়িত করে নিতে হয়। এটা আমার কাছে বেশ ঝামেলার ব্যাপার মনে হয়েছে। ভেবেছিলাম ডকুমেন্ট নিয়ে গেলেই সত্যায়িত করে দেবে। কিন্তু সেটা ছিল শুধুই ফ্যান্টাসি। তাই পুরো প্রক্রিয়া আগে থেকে জানা থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ক্ষেপণ এড়ানো সম্ভব হবে। এমনিতে পুরো প্রসিডিউরটা নিয়ে বিস্তৃত নোট আছে সাইটে, WES Transcript Evaluation.

যা যা সত্যায়িত করতে হয় (যা যা ইভালুয়েশনের জন্য পাঠাতে হয়):

১। অনার্স, মাস্টার্সের সার্টিফিকেট
২। অনার্স, মাস্টার্সের মার্কশিট (অনার্স চার বছরের হলে চার বছরের চারটা মার্কশিটই পাঠাতে হবে) অথবা অনার্স, মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট।

যদি মার্কশিট পাঠান, তবে মোট ৭টি একাডেমিক ডকুমেন্ট পাঠাতে হবে। আর WES Transcript Request Form সহ ৮টা ডকুমেন্ট হবে। আর যদি ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠান, তাহলে মোট ৪টি একাডেমিক ডকুমেন্ট পাঠাতে হবে। আর WES Transcript Request Form সহ ৫টা ডকুমেন্ট হবে।

অনেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, মার্কশিট নাকি ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানো ভালো? উত্তর হল, আমি WES এর ওয়েবসাইটে ডাটা ফিল-আপ করার সময় “মার্কশিট/রেজাল্ট কার্ড” পাঠানোর কথা দেখেছি। কোথাও ট্রান্সক্রিপ্টই পাঠাতে হবে – এমন অত্যাবশ্যকতা নেই। তাই যার যেটা আছে, সেটাই পাঠিয়ে দিন।

আপনার মাস্টার্স আর অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট কার্ডে উল্লিখিত রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার সাল যে মিছা নয়, সেটা প্রমাণের জন্য আপনাকে “রেজাল্ট পাব্লিকেশনের সার্টিফিকেট” উঠাতে হবে। এর জন্য রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের ৩১০ নাম্বার রুম থেকে ১৫/- দিয়ে দুটো ফর্ম কিনতে হবে। একটা অনার্সের জন্য, একটা মাস্টার্সের। সেগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করে ৩০৮ নাম্বার রুমে জমা দিতে হবে। সেখান থেকে আপনাকে বলা হবে টিএসসির জনতা ব্যাংকে দুটো সার্টিফিকেট উঠানো বাবদ ১৫/- করে মোট ৩০/- জমা দিয়ে আসতে। জনতা ব্যাংকে আপনাকে আরেকটা কারণেও যেতে হবে। সেটা হল, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্তৃক আপনার ডকুমেন্ট সত্যায়িত করার ফী জমা দিতে। এই ফী হল ৭৫০/- । এই ফীর ভেতরে ঢাকা ভার্সিটির খামের মূল্যও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যে খামে করে আপনি ডকুমেন্ট পাঠাবেন WES এ। শুধু একটা খামের মূল্য ৪০০/- । এখন আপনি ৩০৫ নাম্বার রুমে গিয়ে WES EVALUATION করাতে চান বললেই আপনাকে একটা ফর্ম দেওয়া হবে (এবার আর ১৫/- লাগবে না, একদম ফিরি!)। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পূরণ করলে একজন স্যার সেই ফর্মে সই করে সিল দিয়ে দেবেন এবং লিখে দিবেন “সত্যায়ন বাবদ ৭৫০/- জমা দেওয়া হইলো” বা এই জাতীয় কিছু। সেই ফর্ম আর সার্টিফিকেট উঠানোর ফর্ম নিয়ে দৌড় দিন জনতা ব্যাংকে। সেখানে তিনটা হলুদ ফর্মে পৃথকভাবে আপনার টাকা জমা দেওয়ার কারণ লিখে টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে ফের দৌড়ান রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে।

এবার ৩০৮ নাম্বার রুমের স্যারকে রশিদ দেখালে উনি বলবেন ৫/৬ দিন পরে এসে “রেজাল্ট পাব্লিকেশনের সার্টিফিকেট” দুটো উঠাতে। চেহারায় দুঃখী ভাব এনে কান্নার উপক্রম করে কনভিন্স করতে পারলে আরো আগে হতে পারে। এবার যান ৩০৫ নাম্বার রুমে। সেখানে আপনার সব ডকুমেন্টের ফটোকপি স্ট্যাপলার মেরে জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট বাক্সে। এটা দিতে হবে ভেরিফিকেশনের জন্য। আপনার দেওয়া ডকুমেন্টগুলো যে আজাইরা নয়, এটা খুঁটিয়ে দেখে সিল মারবেন ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। আপনাকে বলা হবে সত্যায়নের জন্য ৫/৬ দিন পরে আসতে (এক্ষেত্রেও অনুসরণ করা যায় “চেহারায় দুঃখী ভাব এনে…” সূত্রটা। শিখিয়েছেন স্বয়ং ৩০৫ নং রুমের স্যার)। এমনভাবে যাবেন যেন একইদিনে রেজাল্ট পাব্লিকেশনের সার্টিফিকেট উঠিয়ে সব ডকুমেন্ট সত্যায়িত করে আনতে পারেন।

যেদিন যাবেন, ঐদিন অবশ্যই ২/৩ সেট ফটোকপি নিয়ে যাবেন সব ডকুমেন্টের। সাথে WES ওয়েবসাইট থেকে Transcript Request Form প্রিন্ট আউট করে নিয়ে যাবেন কয়েক কপি। সাবধানের মার নেই! এবার ৩০৮ নাম্বার রুমে রশিদ দেখিয়ে উঠিয়ে নিন রেজাল্ট পাব্লিকেশনের সার্টিফিকেট দুটো। চলে যান ৩০৫-এ। জিজ্ঞেস করুন ভেরিফিকেশনের কদ্দূর! এক সপ্তাহের ভেতর হয়ে যাওয়ার কথা। হয়ে গেলে ভেরিফায়েড ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে কোণার দিকে বসে থাকা স্যারকে দেখান। উনি আপনাকে প্রয়োজনীয় গাইডেন্স দিবেন। আমাকে বলেছিলেন WES Transcript Request Form (ওয়েবসাইটের এপ্লিকেশনে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তার সাথে এই ফর্মের তথ্যের যেন কোন অমিল না থাকে) পূরণ করে নতুন একসেট ডকুমেন্ট নিয়ে বড় চেয়ারে বসে থাকা স্যারকে দেখাতে। আমি সবকিছু নিয়ে উনার কাছে গেলে উনি আমার ভেরিফায়েড ডকুমেন্টগুলো দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে Transcript Request Form এর অফিসিয়াল অংশটুকু পূরণ করার জন্য রেজাল্ট পাব্লিকেশনের সার্টিফিকেট হতে সাল জেনে নিলেন। শুধু এই সালের জন্যই আমার ৩০ টাকা গচ্চা গেলো। যা হোক, স্যার এই ফর্ম আংশিক পূরণ করার পর আপনাকে ফটোকপি করে আনতে বলবেন। আনার পর উনি বাকী কাজ করবেন।স্যার কর্তৃক ফর্ম স্বাক্ষরিত এবং সিল-ছাপ্পা মারিত হওয়ার পর আমার নতুন ডকুমেন্টগুলোতে ভেরিফায়েড সিল পড়লো। এরপর সেগুলো আরেক রুমে চলে গেলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্তৃক সত্যায়িত হওয়ার জন্য। সেইসাথে ৩০৫ হতে আপনাকে ঢাকা ভার্সিটির নীল রঙা খামে সিল মেরে দিবে। আধা ঘণ্টা পর সত্যায়িত কপি হাতে পেলাম। কাজ খতম!

ভালোবাসার নীল খামে সমস্ত ডকুমেন্ট ভরে বাংলাদেশ সরকারের অত্যাধুনিক EMS service এর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলাম WES বরাবর।

WES থেকে ভেরিফিকেশন করার কাহিনী

আপনি সমস্ত ডকুমেন্ট পাঠানোর পর WES যখন সেগুলো রিসিভ করবে, তখন তারা আবার সেগুলো ফ্যাক্সের বা ইমেইলের মাধ্যমে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা বা ইমেইল অ্যাড্রেস ওরা নীল খাম থেকেই পেয়ে যাবে। ভার্সিটির কাছে তারা জানতে চাইবে, সত্যিই আপনি এখানকার স্টুডেন্ট কিনা এবং এখান থেকেই এই ডকুমেন্টগুলো পাঠানো হয়েছে কিনা।

ভার্সিটি আপনার সমস্ত ডকুমেন্ট আবার সিল ছাপ্পড় মেরে ফিরতি মেইলে বা ফ্যাক্সে WES এর কাছে পাঠিয়ে দেবে, আর জানিয়ে দেবে যে, আপনি সত্যিই এখানকার স্টুডেন্ট। ব্যস, ভ্যারিফিকেশন শেষ। এরপর শুধুই ইভালুয়েটেড রিপোর্টের অপেক্ষা। আপনি চাইলে নিজের জন্য একটা হার্ড ইভালুয়েটেড কপি অর্ডার করতে পারেন (এতে ডলার লাগবে অবশ্যই!), না করলেও সমস্যা হয় না। কারণ WES ওয়েবসাইটে গিয়ে যখন তখন ইভালুয়েটেড রিপোর্ট দেখা যায়।

তবে একটা জিনিস আপনার সাবধান থাকার জন্য বলে রাখছি। যখন WES ওয়েবসাইটে আপডেট দেখবেন যে, ওরা আপনার ভার্সিটিতে ভেরিফিকেশনের জন্য ডকুমেন্টগুলো পাঠিয়েছে, তখন নিজ দায়িত্বে ভার্সিটিতে গিয়ে খোঁজ নেবেন। অনেক সময় ভার্সিটি গড়িমসি করে আপনার ডকুমেন্ট ফেলে রাখতে পারে পরে ভেরিফাই করবে বলে। এতে আপনারই সময় নষ্ট হবে। তাই প্রয়োজনে তাগাদা দিয়ে কাজ হাসিল করে নেবেন।

বিঃদ্রঃ কোনো তথ্য নিয়ে সন্দেহ হলে বা কোনো তথ্য অজানা থাকলে বা কোন স্টেপ যদি পরিষ্কার মনে না হয়, বারবার জিজ্ঞেস করুন ৩০৫ এর স্যারদের। উনারা খুবই হেল্পফুল।আমার দেওয়া তথ্যে যদি কোন অসঙ্গতি থাকে, দয়া করে মন্তব্যে শেয়ার করুন! ধন্যবাদ সবাইকে।

মন্তব্য

2 comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।