বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই প্রক্রিয়া (University Selection Procedure)

অগাস্ট বা সেপ্টেম্বরে Fall সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হবার দু’তিন মাস পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে নেক্সট Fall এর জন্য এপ্লাই করার দৌড়। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে অনেক ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করার ডেডলাইন থাকবে মার্চ (কখনো কখনো এপ্রিল) পর্যন্ত, তবু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি’র মধ্যেই এপ্লিকেশনের যাবতীয় কাজকর্ম খতম করা উত্তম। কোন ভার্সিটিতে এপ্লাই করবেন, এই প্রশ্নটা চোখে সরষে ফুল দেখিয়ে দিতে পারে। কারণ, সব মিলিয়ে অন্তত চার হাজার (মতান্তরে, আরো বেশি) ইউনিভার্সিটি আছে আমেরিকাতে। এতগুলোর মধ্যে মমতা সহকারে নিজের জন্য ভার্সিটি সিলেকশন বেশ জটিল বটে। চেষ্টা করবো, এই ব্যাপারে একটা comprehensive ধারণা দেয়ার…… নিচের বিষয়গুলো আপনার সার্চ-দ্যা খোঁজ’কে কিছুটা সহজ করে দিতে পারে।

আমাদের বানানো ভিডিও দেখে নিতে পারেন ভালো করে পুরো প্রসেসটা বোঝার জন্য। এখানে, আমেরিকাতে অধ্যয়নরত দুজন স্টুডেন্ট এবং ইউনিভার্সিটি অফ আরকানসা এট মন্টিসেলো এর একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার বলছেন কী কী জিনিস আসলেই মাথায় রাখা দরকার।

চলুন, ঢুকে পড়ি……

1. University Rank – ইউনিভার্সিটির র‍্যাংকিং খুব একটা ইম্পর্ট্যান্ট না, কারণ তিনশোপঞ্চাশতম ইউনিভার্সিটিতে হয়তো এমন একটা ডিপার্টমেন্ট আছে, যেটার র‍্যাংকিং বা ফান্ডিং ৩৩তম ইউনিভার্সিটির চেয়ে ভালো। আর বেশি ভালো ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেকে যাচাই করে নিজ যোগ্যতা অনুসারে ভার্সিটি বাছাই করতে হবে। কাউকে হতাশ করার জন্য বলছি না, তবে এপ্লাই করে এসিস্ট্যান্টশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য বলছি। সাধারণত, ১৫০ থেকে ৪০০ র‍্যাংক পর্যন্ত ইউনিভার্সিটিগুলো হাতের নাগালের মধ্যে থাকার কথা, এবং এগুলিও একেকটা সেইরকম ইউনিভার্সিটি !! এগুলোর ক্লাস বা রিসার্চের মান অনেক অনেক অনেক ভালো !!

2. International Students Acceptance Rate – ভার্সিটি যতই ভালো হোক, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট নেয়ার পলিসি আছে কিনা, জানা দরকার। ওয়েবসাইট ঘুরলেই এই তথ্য খুব দ্রুতই জানতে পারবেন। ওখানে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের এপ্লাই করার জন্য নিয়ম-কানুন বলা থাকবে… আর ম্যাক্সিমাম ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রেই এটা কোন সমস্যা না।

3. Research Level (Funding) – যেখানে রিসার্চ লেভেল ভালো, সেখানে ফান্ডিংও বেশি। ডিপার্টমেন্টে বা প্রফেসরের কাছে রিসার্চের জন্য ফান্ডিং আছে কি নেই, সেটার ওপরেই নির্ধারিত হবে আগামী সেশনে ওরা এসিস্ট্যান্ট নেবে কি নেবে না, অথবা নিলে কতজন নেবে। এই তথ্য যদি বের করতে পারেন, তাইলে আপনাকে আর ঠেকায় কে? আপনার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কেউ যদি আমেরিকার কোন ভার্সিটিতে অধ্যয়নরত থাকে, তাহলে আগে ঐ সিনিয়রকে “আমি আপনাকে পাইলাম” বলে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। ওনার ডিপার্টমেন্টে পরবর্তী সেশনে কোন স্টুডেন্ট নেয়া হবে কিনা, সেটা ওনার জানা থাকার কথা। না জানা থাকলে খবর নিয়ে জানানোর জন্য পীড়াপীড়ি করুন। বড় ভাই-আপুরা এসব ক্ষেত্রে মোটামুটি ভালোই সাহায্য করেন। যদি ওনার ডিপার্টমেন্টে কোন প্রফেসরের কাছে ফান্ডিং না থাকে, তাহলে শুরু করুন (গরু খোঁজা- যদিও এটা একটা প্রবাদ, তবু এই ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো ঠেকছে না। তো, শুরু করুন…) চিরুণী তল্লাশি।

4. Research Topic and Communication with the Faculty Member – ফ্যাকাল্টি মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করতে হলে আগে কার সাথে যোগাযোগ করবেন, তাকে তো খুঁজে বের করতে হবে। ঐ সিনিয়র ভাই বা আপুর ডিপার্টমেন্টেই ঢুঁ মারুন প্রথমে, কোন ফ্যাকাল্টি মেম্বারের সাথে আপনার রিসার্চ ইন্টেরেস্ট মেলে, বের করুন। ওনার মাস্টার্স, পিএইচডি কোথায় সেটা ওনার বায়ো-তে পেয়ে যাবেন। এই তো পেয়ে গেলেন আপনার নেক্সট গন্তব্য। এইবার সেই ইউনিভার্সিটির নাম গু-গোল করলেই ওয়েবসাইট চলে আসবে। অনেকেই ওয়েবসাইটে গিয়েও কোথায় সার্চ করতে হবে, সেটা নিয়ে প্রবলেমে পড়ে। তাদের সুবিধার জন্য বলি, প্রথমে হোমপেজ এ ফ্যাকাল্টি লিংক আছে কিনা দেখুন। না থাকলে সার্চ বার আছে কিনা দেখুন (মোটামুটি সবখানেই থাকার কথা)……থাকলে ওখানে আপনার বিষয় বা ডিপার্টমেন্টের নাম লিখে সার্চ দিন।

আপনার কাঙ্ক্ষিত লিংকে ক্লিক করে প্রবেশ করুন,

চলে যান PEOPLES অথবা FACULTY AND STAFF সেকশনে। সার্চ বার-ও না থাকলে প্রথমে ACADEMIC অথবা FUTURE STUDENTS খুঁজে বের করুন। সেখান থেকে PEOPLE অথবা FACULTY পাবেন, তারপর কোন ডিপার্টমেন্ট এর ফ্যাকাল্টি’কে দেখতে চান, সিলেক্ট করুন।

ওখানে আলাদা আলাদা করে প্রত্যেকের স্পেশালিটি দেয়া থাকে। যেমন, ফরেস্ট্রির ক্ষেত্রে wildlife and fisheries, environmental chemistry, natural resource economics, ecosystem management etc. অথবা ফার্মেসীর ক্ষেত্রে pharmaceutics, pharmacology, medicinal chemistry, etc. সেখান থেকে ইমেইল এড্রেস টুকে নিন এমন ফ্যাকাল্টি মেম্বার এর, যার সাথে আপনার রিসার্চ ইন্টেরেস্ট এর মিল আছে। আপনি অনার্সের প্রজেক্ট পেপার (বা মাস্টার্সের থিসিস) যে টপিক এর ওপর করেছেন, সেটার সাথে যদি তার রিসার্চের মিল থাকে, তাহলে তো ছক্কা! না থাকলেও আলাপ তো শুরু করা লাগে, নাকি? উভয় পরিস্থিতিতেই কিভাবে প্রফেসরের সাথে বাতচিত শুরু করবেন, সেটার একটা স্যাম্পল দেখুন এখানে, Sample email to contact faculty members

অনেক ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক লিস্ট পাওয়া যায়, যেমন, Pharmacy School Ranking

5. Communication with the graduate program coordinator – অনেক ক্ষেত্রেই টিচার বলে দেয়, যে আমাদের ডিপার্টমেন্টে এসিস্ট্যান্টশিপের ডিসিশন নেয়া হয় এডমিশন বা এসিস্ট্যান্টশিপ কমিটির মাধ্যমে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে ওদের ওয়েবসাইট ভালোমত ভিজিট করে জরুরী তথ্য টুকে নিতে হবে, যাতে বারবার একই জিনিসের জন্য ঘুরে সময় নষ্ট না করতে হয়। তারপর যোগাযোগ করতে হবে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরের সাথে। তাকে ইমেইল করে একদম স্পেসিফিক প্রশ্ন করুন। জেনারেল প্রশ্ন করার মানে হচ্ছে, আপনি আপনার হোমওয়ার্ক (ওদের ওয়েবসাইট ঠিকমত চেক) করেননি। তো, জেনারেল প্রশ্ন করলে সে আপনাকে আবার ঐ লিংকগুলো ধরিয়ে দিতে পারে। স্পেসিফিক প্রশ্ন হতে পারে এমন- আগামী সেশনে কতজন এসিস্ট্যান্ট নেবার সম্ভাবনা আছে, গত বছর যারা এসিস্ট্যান্টশিপ পেয়েছে- তাদের GRE, TOEFL স্কোর কেমন ছিলো, অথবা অনার্সের কারিকুলামে কোন কোর্স থাকা আবশ্যক কিনা

6. Weather – তেমন বড় কোন ইস্যু না, কারণ টেম্পারেচার সব জায়গাতেই কন্ট্রোলড- বাসায় এসি, গাড়িতে এসি, ভার্সিটিতে এসি। আর ঠান্ডা নিয়ে টেনশনের কোন কারণ নাই, কারণ ঠান্ডা লাগলে নিজেকে গরম করে তোলা সোজা, কিন্তু একবার গরম হয়ে গেলে ঠান্ডা হওয়া এত সোজা না (অতিরিক্ত কল্পনা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, গরম-ঠাণ্ডা কে তাপমাত্রাজনিত আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করুন)…… তারপরেও কারো যদি ভয়াবহ ঠাণ্ডার সমস্যা থাকে, যেমন- দশ সেকেন্ডও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারবেন না, তাহলে southern US universities, যেমন – Mississippi, Texas, Louisiana, Arkansas, Florida- এসব স্টেটের ইউনিভার্সিটিগুলোতে এপ্লাই করুন।

7. Living cost – আমেরিকার একেক এলাকায় থাকা খাওয়ার খরচ একেক রকম, তাই এসিস্ট্যান্টশিপের বেতনও একেক এলাকায় একেক রকম। তাই, এসিস্ট্যান্টশিপ পেয়ে গেলে এইটা নিয়েও টেনশন করার কিছু নেই। সাধারণত ফান্ডিং জিনিসটা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে ঐ এলাকায় খেয়ে পরে আপনার হাতে ভালো একটা বান্ডিল হাতে থাকে…

8. Deadline – কোন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গেলে শুরুতেই দেখে নিন, এপ্লাই করার ডেডলাইন আছে কিনা। কোন কোন ইউনিভার্সিটির ডেডলাইন ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে ডেডলাইন থাকে মে মাস পর্যন্ত। আরেকটা ব্যাপার, অশিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই ধরনের ডেডলাইন থাকে, একটা যারা এসিস্ট্যান্টশিপ চায়না, অন্যটা যারা চায়। এসিস্ট্যান্টশিপ চাইতে হলে ভিন্ন ডেডলাইন, যেটা সাধারণ ডেডলাইনের চেয়ে দু-এক মাস সামনে থাকে।

কিছু জিনিস মাথায় রাখা দরকার-

১) আমেরিকান টিচারদের জব রেসপনসিবিলিটি ভাগ করা থাকে, যেমন – ৪০% টিচিং, ৬০% রিসার্চ, অথবা এমন কিছু। প্রফেসরের বায়োডাটাতে যদি দেখেন যে সে গত ১৩/১৪ বছরে কোন পেপার পাবলিশ করেনি, তার শানে নূযুল হচ্ছে, তার চাকরি পার্মানেন্ট, এবং তার ফুল রেসপনসিবিলিটি হচ্ছে টিচিং। সে রিসার্চও করে না, রিসার্চ এসিস্ট্যান্টও নেয় না।

২) মোটামুটি ৪টা থেকে ৬টা ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করা উচিৎ, এদের মধ্যে অন্তত তিনটা যাতে মিড র‍্যাংকের (১৫০ থেকে ৪০০) ইউনিভার্সিটি হয়, এবং যাতে হাই র‍্যাংকড ইউনিভার্সিটি এর সংখ্যা ২টার বেশি না থাকে। ৬টার বেশি ভার্সিটিতে এপ্লাই করলে অনুপাত ঠিক রেখে মিড র‍্যাংক ও হাই র‍্যাংক ভার্সিটির সংখ্যা বাড়াতে পারেন।

৩) একই জিনিসের জন্য বারবার ঘুরে যাতে সময় নষ্ট না করতে হয়, এবং নিজের কাজের অগ্রগতির ট্র্যাক রাখার জন্য এমন একটা লিস্ট বানানো যেতে পারে। যে কাজটা শেষ, সেটা সবুজ বা পছন্দসই রঙ দিয়ে মার্ক করে নিতে পারেন।

মন্তব্য

23 comments

Borun Das শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।