এপ্লিকেশনকে শক্তিশালী করা
আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য শুরু হয়ে গেছে এপ্লিকেশন পূরণের ঋতু। একটা এপ্লিকেশনকে শক্তিশালী করার পেছনে কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটা নিয়ে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। সেখানে সংক্ষিপ্তাকারে খুব সুন্দর করে ব্যাপারগুলো বোঝানো হয়েছে। যেমনঃ
১। পরিকল্পনা করা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করাঃ
যেসব ভার্সিটিতে এপ্লাই করতে চান, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করুন। এমন প্রফেসর খুঁজে বের করুন যার ইন্টারেস্ট আপনার ইন্টারেস্টের সাথে মিলে যায়। এপ্লাইয়ের ডেডলাইন খেয়াল করুন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ভার্সিটি দুটো ডেডলাইন দেয় – একটি ফেলোশিপ ডেডলাইন (এটি সাধারণ ডেডলাইনের চেয়ে ১/২ মাস আগে হয়ে থাকে), অপরটি সাধারণ ডেডলাইন।
ফেলোশিপ ডেডলাইন তাদের জন্য যারা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেতে চান। উভয় ক্ষেত্রেই ডেডলাইনের আগে এপ্লাই করতে হবে। অধিকাংশ প্রোগ্রাম ডেডলাইনের পরে পাওয়া এপ্লিকেশন গ্রহণ করে না।
২। লেটার অফ রেকোমেন্ডেশনঃ
অ্যাডমিশন কমিটি সাধারণত ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের কাছ থেকে রেকোমেন্ডেশন লেটার পেতে চায়। কারণ তারা বিশ্বাস করে, একমাত্র ফ্যাকাল্টিরাই স্টুডেন্টের বুদ্ধিমত্তা এবং গ্র্যাজুয়েট স্টাডি করার সামর্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারবেন। বেশীরভাগ ভার্সিটি তিনটা লেটার চায়। চেষ্টা করুন আপনার রিসার্চ সুপারভাইজার এবং কোর্স ইন্সট্রাক্টরদের কাছ থেকে লেটারগুলো নিতে। কোন প্রফেসর/অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর/অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর আপনার সম্পর্কে পজেটিভ কিছু লিখতে পারেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন, এবং তাঁকেই রেফারী হিসেবে নির্বাচিত করুন।
৩। GRE স্কোরঃ
গ্র্যাজুয়েট স্টাডি করতে গেলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই টেস্টটি লাগে। এর তিনটা অংশই (Quantitative, Analytical, এবং Verbal) গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাধারণভাবে মনে করা হয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টদের জন্য Quantitative অংশটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এরপর জরুরী হলো Analytical অংশটি। Verbal-কে এক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়। কিন্তু Humanities (ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, নাট্যকলা, সঙ্গীত ইত্যাদি)-এর স্টুডেন্টদের জন্য Verbal অংশটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। Social Sciences স্টুডেন্টদের জন্য তিনটা অংশই সমান গুরুত্বপূর্ণ। Economics-এর স্টুডেন্টদের জন্য Quantitative সেকশনটি গুরুত্বপূর্ণ।
কোনো ভার্সিটি যদি সাবজেক্ট GRE স্কোর (Biochemistry, Cell and Molecular Biology, Biology, Chemistry, Literature in English, Mathematics, Physics, Psychology – এই কয়টি বিষয়ের উপর সাবজেক্ট GRE পরীক্ষা হয়) চায়, তাহলে তারা সাধারণ GRE-এর তুলনায় সাবজেক্ট GRE স্কোরের উপরেই গুরুত্ব দিবে বেশী।
কিছু কিছু ভার্সিটিতে প্রতিটা বিভাগের জন্য ন্যূনতম রিকোয়ারমেন্ট দেওয়া থাকতে পারে। যেমনঃ Quantitative, Analytical এবং Verbal – তিন ক্ষেত্রেই মার্কস 50 percentile-এর উপরে হতে হবে। আবার অনেক ভার্সিটিতে কোনো ন্যূনতম রিকোয়ারমেন্ট নাও থাকতে পারে। তবে GRE-তে একটা শক্তিশালী ব্যালেন্সড স্কোর (তিনটি অংশেই ব্যালেন্সড পয়েন্ট) আপনার CGPA জনিত দুর্বলতা ঢেকে দিতে পারে। তাই যারা সামনে পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করুন প্রতিটি বিভাগেই 50 percentile-এর উপর মার্কস তুলতে।
৪। অনার্স, মাস্টার্সের রেজাল্টঃ
বেশীরভাগ ভার্সিটির রিকোয়ারমেন্ট হিসেবে অনার্সের CGPA কমপক্ষে 3.0 (4.0 এর স্কেলে) চাওয়া হয় এবং মাস্টার্স করা থাকলে মাস্টার্সের CGPA 3.3/3.5 চাওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অনার্সের শেষ দুই বছরের CGPA-কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আপনার CGPA যত বেশী হবে, আপনার জন্য তত ভালো হবে।
গ্র্যাজুয়েট স্টাডির Prerequisite কোর্স হিসেবে বিবেচিত যেসব সাবজেক্ট আপনি অনার্স এবং মাস্টার্সে পড়েছেন, সেগুলোতে প্রাপ্ত গ্রেড বিবেচনায় নেওয়া হয়।
৫। গবেষণা বা কাজের অভিজ্ঞতাঃ
অনার্স/মাস্টার্সে রিসার্চের অভিজ্ঞতা থাকা নিঃসন্দেহে একটা বড় সুবিধা। আন্ডারগ্র্যাড রিসার্চ করলে আপনার ভবিষ্যৎ রিসার্চ কী নিয়ে করতে চান, সে বিষয়ে একটু হলেও আন্দাজ চলে আসে। এছাড়া ল্যাব এক্সপেরিয়েন্সও বড় বিষয়। যদি একাডেমিক রিসার্চের বাইরে আপনার সাবজেক্ট সম্পর্কিত কোনো রিসার্চ অভিজ্ঞতা থাকে, সেটা ভালো। যদি ইন্টার্নশিপ করে থাকেন, তাহলে সেটাও হবে মুকুটে আরেকটি পালক।
৬। স্টেটমেন্ট অফ পারপাসঃ
এটাকে সংক্ষেপে SoP বলা হয়। এপ্লিকেশন প্রক্রিয়ার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রচনাটি থেকে ভর্তি কমিটি বুঝতে পারে গ্র্যাজুয়েট স্টাডির প্রতি আপনি কতোটুকু সিরিয়াস এবং এটি করার জন্য আপনি কতোটুকু উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত।
SoP লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রচুর আর্টিকেল আছে এই ওয়েবসাইটে। সেগুলো পড়ে ধারণা নিতে পারেন আপনারটি কীভাবে লিখতে হবে। তবে লেখার সময় আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট সম্পর্কে যত স্পেসিফিক হওয়া যায়, তত ভালো। এছাড়া আপনি কাঙ্ক্ষিত ভার্সিটির কোন কোন প্রফেসরের সাথে কাজ করতে চান, সে বিষয়ে উল্লেখ করা হলে কমিটি বুঝতে পারে আপনি হোমওয়ার্ক করেছেন এবং সত্যিই গ্র্যাজুয়েট স্টাডির জন্য সিরিয়াস। SoP-এ উল্লিখিত প্রতিটা তথ্যই সত্যি হওয়া আবশ্যক।
৭। IELTS/TOEFL স্কোরঃ
আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টদের জন্য IELTS/TOEFL পরীক্ষা দেওয়াটা প্রায় বাধ্যতামূলক। এসব পরীক্ষার জন্যেও ন্যূনতম একটা রিকোয়ারমেন্ট থাকে। যেমন, IELTS-এর জন্য কমপক্ষে 6.5 (প্রতিটা ব্যান্ডে কমপক্ষে 6 পেতে হবে) এবং TOEFL (iBT)-এর জন্য কমপক্ষে 79। ভার্সিটি ভেদে এই রিকোয়ারমেন্ট পাল্টায়। তাই আপনি “মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট”-এর চেয়ে যত বেশী ভালো করবেন, ততই লাভ।
৮। শেষ কথাঃ
সফলভাবে এপ্লিকেশন সাবমিট করার জন্য নানা ধরণের ডকুমেন্টের প্রয়োজন পড়ে। যেমন – অনার্স/মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সার্টিফিকেট, GRE এবং IELTS/TOEFL পরীক্ষার অফিসিয়াল রিপোর্ট, রেকোমেন্ডেশন লেটার, রেজুমে, ফাইনান্সিয়াল ডকুমেন্ট ইত্যাদি। খেয়াল রাখতে হবে, অফিসিয়ালভাবে GRE এবং IELTS/TOEFL পরীক্ষার যে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে এবং ভার্সিটি হতে অফিসিয়ালভাবে আপনি যে ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠাবেন, সেগুলো যেন অবশ্যই ডেডলাইনের আগে পৌঁছায়। একইভাবে প্রফেসররা যেন ডেডলাইনের আগে রেকোমেন্ডেশন লেটার সাবমিট করেন।
সবার জন্য শুভ কামনা!