অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ চান? চার বছর সংগ্রাম করার গল্পটা পড়ুন

আমার টার্গেট ছিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডিতে অ্যাডমিশন পাওয়া। কিন্তু ২০১৫ সাল থেইকা পিএইচডির পিছে ছুটতে ছুটতে ব্যর্থ হইয়া অবশেষে ২০১৮ সালে আইসা ঠিক করলাম, মাস্টার্সে একটা গুঁতা দিয়া দেখি। যদি হয়, তাইলে মাস্টার্স শেষে পিএইচডির পিছে ছুটুম। কিন্তু কেন পিএইচডিতে আমি অ্যাডমিশন পাইতেছিলাম না, তার পিছে বেশ কিছু কারণ বাইর করছিলাম। যেমন, আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে আমার কিছুই ছিল না। না ছিল অনার্সে ভালো রেজাল্ট, না ছিল ভালো GRE স্কোর, না ছিল সম্মানজনক IELTS স্কোর, না ছিল পাব্লিকেশন। মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পাইছিলাম, কিন্তু এটা যথেষ্ট ছিল না অ্যাডমিশন কমিটিকে মুগ্ধ করার জন্য।

অনার্সে যে রিসার্চ করছিলাম, সেটাকে রিসার্চ না বইলা রোগীদের ডাটা কালেক্ট কৈরা সুপারভাইজারের দেখানো উপায়ে ক্যাল্কুলেট করা বললে সঠিক হয়। কী উপায়ে গবেষণা করলাম, কী রেজাল্ট বাইর হইলো, যেটা বাইর হইলো সেটা ক্যামনে বাইর করলাম, কিছুই বুঝি নাই। গোঁজামিল দিয়া একটা পেট মোটা থিসিস পেপার লেইখা (যেখানে বানান ভুল, বাক্য ভুল) নীলক্ষেতে দৌড়াইছিলাম। চকচকা কাভার দিয়া তথ্য উপাত্তগুলা বাঁধাই কৈরা উপরে সোনালি অক্ষরে নিজের নাম খোদাই করছিলাম। ভাবছিলাম, আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী সূত্র অনুযায়ী ভিত্রের মালমসলা অপেক্ষা বাইরের চাকচিক্য অধিক মূল্যবান। আরও ভাবছিলাম, থিসিস যত মোটা হইব টিচাররা তত খুশি হইবেন কারণ আমরা ম্যালা খাটছি। অথচ বড় হইয়া যখন জানলাম অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের থিসিস মাত্র ১৮ পৃষ্ঠার ছিল, তখন আমরা বোকা, নাকি আইনস্টাইন, বুঝলাম না। তাছাড়া ইন্টার্নশিপ কিংবা সার্ভে, সবই টিচাররা করাইছেন কিন্তু কিছুই ভালোভাবে করি নাই। ফলে পুষ্টির জগতে কুতুব হইতে পারি নাই। এমতাবস্থায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা পাপ বইলাই ভ্রম হইছিল।

মাস্টার্সের পর একজন রিসার্চ সুপারভাইজারের অধীনে ৩ মাস বিনা বেতনে খাটছিলাম। বেতন দিবেন দিবেন কৈরা দিতেছিলেন না বইলা আর কাজ করার উৎসাহ পাইতেছিলাম না। যা হোক, কিছু না বুইঝা থিসিস করলেও সবেধন নীলমণি অনার্সের থিসিস আর মাস্টার্স পরবর্তী ৩ মাসের এই গবেষণা অভিজ্ঞতা নিয়াই আমার দৌড়াইতে হইছে। সিভি ভারী করার জন্য এগুলা সম্পর্কে লেখা ছাড়া বিকল্প ছিল না। পরবর্তীতে VLCC নামক একটা ফিটনেস সেন্টারে নিউট্রিশনিস্ট হিসেবে চাকরি পাইলেও সেখানে কয়েকমাস থাইকা ইস্তফা দিয়া দিলাম। অথচ পড়ালেখা রিলেটেড চাকরি দেখাইতে গিয়া এই নীলমণিকেই আমার আঁকড়াইয়া ধরতে হইছে। মোট কথা, ফুড এন্ড নিউট্রিশন সম্পর্কিত খুচরাখাচরি অভিজ্ঞতা যেখান দিয়া যা পাইছি, সব সুন্দর কৈরা লিইখা দিছি স্টেটমেন্ট অফ পারপাস আর সিভিতে।

মাস্টার্স পাশ করছিলাম ২০১৩ সালে। এরপর থেইকা বৈদেশ যাওয়ার ভূত তাড়া করতে শুরু করলাম। নেট ঘাঁটায় ঘুঁটায় যা বুঝলাম তা হইলো, আম্রিকায় যাওয়ার জন্য পাব্লিকেশন থাকলে ভালো, না থাকলেও চলে। অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্ট ভালো না হইলে কাইন্দা বুক ভাসানির দরকার পড়ে না, আছে GRE । এইটাতে ভালো স্কোর তুইলা অনার্স-মাস্টার্সের রেজাল্টের ক্ষতি পূরণ করা যায় (ডিস্ক্লেইমারঃ এইটা শুইনা একাডেমিক পড়াশুনায় ঢিলা দেওয়া চলবে না। উচ্চ CGPA এবং উচ্চ GRE স্কোর পরস্পরের সম্পূরক না)। এতসব আশা দেখতে পাইয়া আমি আদা জল খাইয়া লাগলাম একটা ডিসেন্ট GRE আর IELTS স্কোর তুলার জন্য। কিন্তু ২০১৪ সালটা আমার জীবনে এক বিভীষিকা হইয়া আসলো। ঐ বছরের জানুয়ারি মাসে GRE পরীক্ষা দিয়া আমি ২৮৭ পাইলাম। নিজেরে সান্ত্বনা দিলাম এই বইলা, জব করার পাশাপাশি GRE পড়া অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমি জানি যে, আমি ১০০% দিয়া চেষ্টা করি নাই। তাই ভাইঙ্গা পড়লেও আবার উইঠা দাঁড়াইলাম। জবের পাশাপাশি আবার স্টাডি শুরু করলাম। আরও সিরিয়াসলি। ফলাফল, GRE-তে আসলো ৩০২ আর IELTS-এ ৬.৫। পেপারে ছবি আসার মত ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট না হইলেও ধইরা নিলাম, মিডল র‍্যাংকের ভার্সিটিগুলাতে আবেদন করার মত মোটামুটি স্কোর যোগাড় করতে পারছি। তাই ২০১৫ সালের ফলে এপ্লাই করার নিমিত্তে প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলাম।

এটা সেই ২০১৪ সালের কথা। তখন উচ্চশিক্ষা বিষয়ে এত এভেইলেবল পোস্ট আর আর্টিকেল ছিল না। কীভাবে প্রফেসরদের মেইল লিখবো, সেটা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তাই বিশাল বড় সব মেইল দিতাম সবাইকে। বেশিরভাগের রিপ্লাই আসতো না, যেগুলার আসতো সেগুলার কয়েকটা থাকতো নেতিবাচক, কয়েকটা থাকতো জেনেরিক রিপ্লাই। কিন্তু জেনেরিক রিপ্লাইয়ের ভাষা বুঝার মত জ্ঞানগম্যি আমার ছিল না। আমি ভাবতাম, এপ্লাই করতে বলছে মানে ফান্ড পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এইভাবে কয়েকটা ভার্সিটি সিলেক্ট করছিলাম। সাথে একজন প্রফেসর সরাসরি লিখছিলেন যে, তিনি আমাকে নিতে চান। উনার ভার্সিটিসহ মোট চারটা ভার্সিটিতে আবেদন করছিলাম। দুঃখের বিষয়, কোনোটা থেইকাই অ্যাডমিশন আসে নাই।

দুঃখের পর একটা মজার অভিজ্ঞতা শুনেন। আমি আমার এক টিচারকে অনুরোধ করছিলাম যেন রেকোমেন্ডেশন লেটারে আমার সম্পর্কে ভালো ভালো কথা লেখেন। আমি উচ্চশিক্ষার জন্য যোগ্য একজন প্রার্থী, ক্লাসের মনোযোগী স্টুডেন্ট, দলবল নিয়া কাজ করতে দিলে ফাটায় ফেলাই, আমার মধ্যে ভবিষ্যৎ নেতার গুণাবলী দেইখা তিনি মুগ্ধ ইত্যাদি। সাথে বলছিলাম ভার্সিটি থেইকা আমাকে ইভালুয়েট করার জন্য যে MCQ ফর্ম উনাকে দিবে, সেটায় যেন খারাপ কিছু না দাগান। সবকিছুতে বেস্ট/মিডিয়াম ইত্যাদি না হইতে পারলে অন্যদের সাথে লড়বো ক্যামনে?

তো উনি এর আগে কখনো ইন্টারনেটে রেকোমেন্ডেশন দেন নাই। তাই এই বিষয়ে অভিজ্ঞ আরেক টিচারকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সম্পর্কে কী লেখা যায়। শুনলে আশ্চর্য হইবেন, দ্বিতীয় টিচার বললেন, “ওকে কোনোকিছুতে বেস্ট দিবেন না। মিডিয়াম আর পুওরের মধ্যে ঘোরাফেরা করবেন। এই মেয়ে আমেরিকায় গিয়ে কেমন রেজাল্ট করবে কে জানে। ভালো কথা লিখে আমরা বিপদে পড়বো নাকি? খারাপ রেজাল্ট করলে তো আমাদেরকে ধরতে পারে, কেন আমরা ওর বিষয়ে ভালো লিখেছি।” প্রথম টিচার বেশ সহজ সরল ছিলেন। তাই মুখ ফসকে আমাকে বলে ফেলছিলেন এই আলাপচারিতার কথা। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হইয়া গেছে। তিনি লেটার সাবমিট কৈরা দিছেন। তাই আর রেকোমেন্ডার বদলাইতে পারলাম না। কিন্তু উচ্চশিক্ষার যাত্রাপথে এই প্রথম আমার চোখে পানি আসলো।

অ্যাডমিশন না আসার কারণ হিসেবে অনুমান করলাম আমার নিম্নমানের সার্বিক প্রোফাইল। কিন্তু প্রোফাইল উন্নত করার জন্য পুনরায় GRE আর IELTS পরীক্ষা দেওয়ার প্যাঁড়ায় যাইতে ইচ্ছা করলো না। ফলে ২০১৬ সালের ফলে একই প্রোফাইল নিয়া ঝাঁপায় পড়লাম। বদলের মধ্যে শুধু প্রফেসরদের নক করার ফরম্যাট পরিবর্তন করলাম। বিশাল মেইলরে কাইটা ছাঁইটা মিডিয়াম ভার্সনের বানাইলাম কিন্তু SOP, CV একই রাখলাম। এবার খুব সম্ভবত শর্ট মেইলের কারণে আগের তুলনায় বেশি রিপ্লাই পাইলাম। যদিও বেশিরভাগই জেনেরিক আর নেগেটিভ রিপ্লাই, তবে দুইটা রিপ্লাই পাইলাম পজিটিভ। উনারা আমাকে নিতে চান উনাদের ল্যাবে। আমি বেক্কল শুধু এই দুই ভার্সিটিতেই এপ্লাই করলাম, আর আক্কেল সেলামি দিলাম দুই ভার্সিটি থেইকা নম্র ভদ্র রিজেকশন লেটার পাইয়া।

এবার আমার টনক নড়ল। “কাহানি ভার্সিটি ভার্সিটি কি” জানতে হবে। কী কারণে আমি বারবার রিজেক্টেড হইতেছি? মেইলে সবাই আশা দিতেছেন যে নিবেন, অথচ ফুল এপ্লিকেশন পাওয়ার পর সবাই পিছু হটতেছেন। সাথে হতাশও হইলাম প্রচণ্ড। ভাবলাম, উচ্চশিক্ষা আমার জন্য না। এই প্রোফাইল নিয়া আর যাই হোক, আম্রিকান ড্রিম দেখা একটা নিষ্ঠুর রসিকতা। তাই হাত পা গুটাইয়া নিলাম। বইলা রাখা ভালো, গত ৫.৫ বছর যাবত আমি নিউট্রিশন রিলেটেড জব থেকে বিচ্ছিন্ন। জব করতেছি টেক্সটাইল সেক্টরে। কীভাবে এইখানে আসলাম, সে আরেক গল্প। এই ৫.৫ বছরে পুষ্টির সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নাই। ব্যক্তিগতভাবে গবেষণা কৈরা যে প্রোফাইল ভারী করবো, সে সুযোগও পাই নাই। তাই মনে হইত, বিশাল এই গ্যাপখানা কি আমার রিজেকশন পাওয়ার পিছে ভূমিকা রাখতেছে কিনা।

এসব ভাইবা ২০১৭ সালের জন্য কোনো চেষ্টা করলাম না। পুরা একটা বছর হাত ফসকায় গেলো। কিন্তু ২০১৭ সালে বিয়া করার পর জামাই বাবাজী আমারে ঠেলতে লাগলেন স্বপ্ন পূরণের জন্য। আমার চেয়ে তেনার আগ্রহ বেশি। আমার তিন বছরের সাধনার গল্প শুইনা উনি যারপরনাই উৎসাহিত। বললেন, ২০১৮ সালে আবার ট্রাই নিতে। উনার আগ্রহের চোটে আমার ভিতরের ছাইচাপা আগুন জ্বইলা উঠলো। আমি ফিনিক্স পাখির মত ছাই থেইকা পুনর্জন্ম লাভ করলাম।

এবার আগের সব ভুল সংশোধন কৈরা যথাসম্ভব অ্যাপিলিং একটা হোলিস্টিক প্রোফাইল দাঁড় করাইলাম। বিশাল পরিবর্তন আনলাম SOP-এর বর্ণনায় আর CV-র ফরম্যাটে। হায়ার স্টাডি এব্রোড গ্রুপ থেকে এক পিএইচডি অধ্যয়নরত ভাইয়ের সিভি ফরম্যাট অনুযায়ী মাত্র এক পৃষ্ঠার সিভি বানাইলাম। আগে হাবিজাবি অনেক তথ্য দিয়া দুই পৃষ্ঠার সিভি বানাইছিলাম। এবার শুধু পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উল্লেখ করলাম। দেখতে হইলো আরও স্মার্ট, আরও প্রফেশনাল। SOP পুরাটা নতুনভাবে লিখলাম দুই মাস সময় নিয়া। প্রচুর কাটাকাটি করলাম। যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের কাছে স্ট্যান্ডার্ড মনে না হইলো, কাটতে থাকলাম। কেন ৫.৫ বছর যাবত আমি পুষ্টিবিজ্ঞানের বাইরে জব করতেছি, কেন আবার পুষ্টিতে ফিরতে চাইতেছি ইত্যাদি বিষয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিলাম। এক পর্যায়ে গিয়া মনে হইল, এবার এটাকে ব্যবহার করা যায়। তারপর মাঠে নামলাম ২০১৮ সালের ফলকে টার্গেট কৈরা।

IELTS-এর মেয়াদ শেষ হইয়া গেছিল বইলা ২০১৭ সালে আবার বসতে হইছে পরীক্ষায়। এবার জিদ্দের চোটে স্কোর আসলো ৭.৫।

এবার আমার কৌশলেও পরিবর্তন আনলাম। আগে সরাসরি পিএইচডিতে অ্যাডমিশনের জন্য এপ্লাই করছি। এবার আর এই ভুল করলাম না। আমার প্রোফাইল যদি অ্যাডমিশন কমিটির কাছে পিএইচডির জন্য উপযুক্ত মনে না হয়, অন্তত মাস্টার্সের জন্য উপযুক্ত মনে হইতে পারে! সেই চিন্তা থেইকা দুইটা ভার্সিটিতে মাস্টার্সে আর একটাতে পিএইচডিতে এপ্লাই করলাম।

এবার প্রফেসরদের নক করার জন্য মেইলিং ফরম্যাটও পুরাপুরি বদলায়া ফেললাম। মাত্র ১২ লাইনের মেইলে আমার ইন্টারেস্ট, উনার রিসার্চ, আমার অভিজ্ঞতাসমূহ, উনার সাথে কাজ করার ইচ্ছা সব আঁটাইয়া ফেললাম। এই ফরম্যাটের সুফলও পাইলাম হাতে নাতে। বেশিরভাগ মেইলের উত্তর আসলো, যদিও নেতিবাচক উত্তরের সংখ্যাই বেশি। যা হোক, নেতিবাচক উত্তর পাইয়া মন খারাপ কৈরা আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আর কোনো মেইলিং না। এবার ডাইরেক্ট এপ্লাই করুম। তিনটা ভার্সিটি খুঁইজা বাইর করলাম যাদের রিকোয়ারমেন্টের সাথে আমার প্রোফাইল মিইলা যায়। এরপর কোনো প্রফেসর কন্টাক্ট না কৈরা ওইগুলাতে এপ্লাই করলাম। আমি একই সাথে স্প্রিং ২০১৯-এর জন্যেও কয়েকজন প্রফেসরকে নক করা শুরু করছিলাম। তাদের মধ্যে একই ভার্সিটির দুইজন প্রফেসর আমার সাথে কাজ করার ব্যাপারে অত্যন্ত উৎসাহ দেখাইছিলেন। উনাদের কারণে ঐ ভার্সিটিতে স্প্রিং ২০১৯-এর জন্য পিএইচডিতে এপ্লাই করলাম।

রেজাল্ট যখন আসলো তখন দেখলাম, ফল ২০১৮-তে একটা ভার্সিটিতে মাস্টার্সে ফুল ফান্ড পাইছি, আর স্প্রিং ২০১৯-এ পিএইচডিতে অ্যাডমিশন পাইছি কিন্তু ফান্ডের ব্যাপারে এখনো কিছু জানায় নাই। সেপ্টেম্বরের দিকে জানানোর কথা।

তো, বিশাল এই পোস্ট দেওয়ার কারণ হইলো, হতাশ হইবেন ঠিক আছে। কিন্তু হতাশা কাটাইয়াও উঠতে হবে। এক বছর ফেইল মারলে কেন ফেইল মারছেন, সেটা খুঁইজা বাইর করবেন। তারপর পরের বছর সেই ভুলগুলা শুধরাইয়া এপ্লাই করবেন। পারলে বিভিন্ন উপায়ে নিজের প্রোফাইলরে শক্তিশালী করবেন। ভলান্টারি সার্ভিস ব্যাপারটা আমাদের দেশে তেমন প্রচার পায় না। কিন্তু পড়াশোনার সাথে রিলেটেড ফিল্ডে এইরকম অভিজ্ঞতা থাকলে সেটাও আপনার সিভিরে ভারী করবে। সাথে স্টাডি রিলেটেড বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশ নিবেন। এগুলা সবই উপকারী।

প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করা অবশ্য কর্তব্য। তবে প্রফেসর রিপ্লাই না দিলে যে ঐ ভার্সিটিতে এপ্লাই করার দরকার নাই, এমনটা ভাইবেন না। নিজের প্রোফাইলের সাথে মিইলা গেলে আপনার পছন্দের ভার্সিটিতে সরাসরি এপ্লাই করতে পারেন। GRA পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকতে পারে, GTA কম কীসে?

কোনো ভার্সিটি থেকে যদি প্রফেসর পজিটিভ রিপ্লাইও দেন, তাও অন্তত ৩টা ভার্সিটিতে এপ্লাই করা উচিৎ। পরপর দুই বছর আমি এই ভুল করছিলাম। উপরে বিস্তারিত বলছি। বিশটারও বেশি মেইল চালাচালি হইছিলো প্রফেসরদের সাথে। অথচ দিনশেষে পাইছি রিজেকশন লেটার। আসলে এডমিশন ডিসিশন উইথ ফান্ড না আসা পর্যন্ত কোনোকিছুই ফাইনাল না। তাই প্রফেসরের কথার উপর ভিত্তি কৈরা শুধু একটা ভার্সিটিতেই এপ্লাই কৈরা নিশ্চিন্ত থাকা উচিৎ হবে না।

পড়াশোনা সম্পর্কিত চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকলেও, কিংবা মেজর সাবজেক্টের বাইরে গিয়া সম্পূর্ণ অন্য ফিল্ডে চাকরি করলেও ফান্ড সহকারে এডমিশন পাওয়া যায়। কিন্তু আপনাকে SOP-তে খুব সুন্দর কৈরা যুক্তি দিয়া বুঝাতে হবে, কেন আপনি মেজর সম্পর্কিত চাকরি না কৈরা অন্য ফিল্ডের চাকরি করছেন। এডমিশন কমিটিকে কনভিন্স করাইতে পারলে ফান্ড সহকারে এডমিশন পাওয়া সম্ভব।

বোনাস পয়েন্টঃ STEM রিলেটেড সাবজেক্টগুলোতে কোন ভার্সিটির কোন প্রফেসর কেমন ফান্ড পাইছেন, সেটা জানার জন্য https://report.nih.gov/award/ ভালো একটা ওয়েবসাইট। এছাড়াও সময়ে সময়ে আমি গুগলে সার্চ দিতাম “Assistantship opportunity for nutrition in US” লিইখা। আপনাকেও বিভিন্ন উপায়ে চিরুনি তল্লাশি চালাইতে হবে।

মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।