নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভার্সিটি এবং সাবজেক্ট খোঁজার তরিকা
বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার প্রক্রিয়া – মূল পোস্ট
অনেক পোস্ট দেখি যেখানে ভর্তিচ্ছু জনগণ নিজেরা ভার্সিটি না খুঁজে নিজের প্রোফাইল পোস্ট করে অন্যদের অনুরোধ করেন প্রোফাইল মাফিক ভার্সিটি সাজেস্ট করার জন্য। আমার মতে, এটা ঠিক নয়। কারণ, এক্ষেত্রে আপনি অন্যের পছন্দানুযায়ী ভার্সিটি পছন্দ করছেন। অনেকে হয়তো এমন একটা ভার্সিটি স্কিপ করে গেলো যেখানে আপনার আকাংখিত প্রোগ্রামের জন্য রয়েছে দারুণ সুযোগ!
অন্যরা কিন্তু আপনার প্রায়োরিটি জানে না। নিজে না খুঁজলে আপনি সব ধরণের ভার্সিটি সম্পর্কে সম্যক ধারণাও পাবেন না, কোন ভার্সিটিতে কী সুবিধা পাওয়া যায় সে সম্পর্কেও অজ্ঞ থাকবেন। তাই সবারই উচিৎ নিজে নিজে ভার্সিটি সম্পর্কে ঘাঁটাঘাঁটি করে একটা শর্ট লিস্ট বানিয়ে তারপর অন্যদের কাছ থেকে সেই লিস্ট সম্পর্কে সাজেশন চাওয়া।
ভার্সিটি খোঁজা তেমন কঠিন কিছু নয়। গুগলে “US Universities for X” লিখে সার্চ দিলেই অনেক অপশন আসবে (এখানে X = আপনার সাবজেক্ট)। পারলে প্রতিটা অপশনেই ঢুঁ মারবেন। একেক অপশন একেক লিস্ট দেখাবে। সব লিস্টের ভার্সিটিগুলোকে একত্র করে নিজস্ব একটা লিস্ট বানিয়ে নিতে পারেন। এরপর সেই লিস্ট অনুযায়ী প্রতিটা ভার্সিটির ওয়েবসাইটে ঢুকে চিরুনি তল্লাশি চালান।
প্রায় সব ভার্সিটিরই ওয়েবসাইটে ঢোকার পর প্রথম পেইজে দেখা যায় Search এবং A-Z Index নামক দুটো অপশন। আপনি ইচ্ছা করলে যেকোনো একটা অপশন বেছে নিতে পারেন। Search লেখা ঘরে আপনার কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্টের নাম লিখে GO চাপ দিতে পারেন অথবা A-Z Index অপশনে ক্লিক করে বর্ণমালা অনুযায়ী ঐ ভার্সিটির সমস্ত সাবজেক্টের নাম দেখতে পারেন। আপনার সাবজেক্টটি যে অক্ষর দিয়ে শুরু, সেখানে ক্লিক করে সরাসরি চলে যেতে পারেন ঐ অক্ষরের লিস্টে। সেখানে আপনার সাবজেক্টের লিংক দেওয়া থাকবে। ক্লিক করুন, চলে যান ওয়েবসাইটে।
সাবজেক্টের ওয়েবসাইটেও সার্চ অপশন দেখতে পাবেন। তাছাড়া এখানে ABOUT US, RESEARCH, FACULTY/PEOPLE, CURRENT STUDENT, FUTURE/PROSPECTIVE STUDENT, UNDERGRADUATE, GRADUATE ইত্যাদি অপশন থাকে যা থেকে আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয়টি। PhD বা MS হলে “গ্র্যাজুয়েট স্টাডি” অপশন বেছে নিতে হবে। যদি এই অপশন না থাকে, তাহলে সাধারণত ABOUT US থেকে কী কী ডিগ্রী অফার করা হয়, তা জেনে নেওয়া যায়। PEOPLE/FACULTY অপশনে গেলে জানতে পারবেন কোন কোন প্রফেসর আপনার বিষয়ের উপর কাজ করেন এবং কার রিসার্চ ইন্টারেস্ট কীসের উপর ফোকাস করছে। এই ফ্যাকাল্টিদের মধ্যে যারা Adjunct বা Emeritus, উনাদেরকে মেইল না দেওয়াই ভালো। কারণ উনাদের কাছে বেশীরভাগ সময়েই ফান্ড থাকে না।
এই পেইজে প্রত্যেক প্রফেসরের নিজস্ব পেইজের বা ল্যাব ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া থাকে। ফলে আপনার পরবর্তী গন্তব্য নির্ধারিত হয়ে গেলো। এখানে বলা দরকার, অবশ্যই আপনার ইন্টারেস্টের সাথে মিলে যায়, এমন প্রফেসর খুঁজে বের করবেন। তাঁদের বিষয়ে ভার্সিটির ওয়েবসাইটে যা দেওয়া থাকে, খুঁটিয়ে পড়বেন। দরকার হলে প্রফেসরের নাম গুগল করে বাড়তি কিছু জানার চেষ্টা করবেন। প্রফেসর সম্পর্কে যত ভালো জানবেন, তাঁকে মেইলে কোনভাবে এপ্রোচ করতে হবে, সেটাও তত সহজে বুঝবেন।
সব প্রফেসরের নিজস্ব ল্যাবরেটরি ওয়েবসাইট থাকে না। সেক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যদি দেখেন গত কয়েক বছর ধরে প্রফেসর নিয়মিত পেপার পাবলিশ করছেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন, তিনি রিসার্চে সক্রিয়। কিন্তু অনেককে দেখা যায় গত পাঁচ/ছয় বছরে কোনো রিসার্চ একটিভিটি নেই। সেক্ষেত্রে উনাকে মেইল না দেওয়াই ভালো।
ল্যাব ওয়েবসাইটে প্রফেসরের বর্তমান রিসার্চ, সেগুলোর ফান্ড কোত্থেকে আসছে, ল্যাবে কয়জন গ্র্যাজুয়েট এবং আন্ডার গ্র্যাজুয়েট সদস্য আছেন, ল্যাবে যোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কিনা, কী কী পাব্লিকেশন এখন পর্যন্ত করা হয়েছে – এসব নিয়ে লেখা থাকে। অনেক সময় সাম্প্রতিক কী গ্র্যান্ট পেয়েছেন প্রফেসর, সে বিষয়েও উল্লেখ করা থাকে।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় যে লিস্ট আমরা বানাই, চূড়ান্ত লিস্টে সেই ভার্সিটির অনেকগুলোই থাকে না। কারণ, প্রথমে এক ঝলক দেখে আমরা একটা ভার্সিটি পছন্দ করি। এরপর বারবার সেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নানা সীমাবদ্ধতা খুঁজে পাই। বুঝতে পারি, এই ভার্সিটির প্রোগ্রামটি আমার জন্য নয়। নিজের ইন্টারেস্ট অনুযায়ী প্রফেসর খুঁজে না পেলে, প্রফেসর নেগেটিভ রিপ্লাই দিলে ভার্সিটি বাদ পড়ে যায়। ডেডলাইনের সমস্যার কারণে, রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করা না গেলে, প্রিরিকোয়িজিট কোর্সসমূহ করা না থাকলেও ভার্সিটি বাদ পড়তে পারে। আর এসব সমস্যা আপনি বুঝতে পারবেন যখন নিজে ভার্সিটি নিয়ে গবেষণা করার জন্য কাছা বেঁধে নামবেন। তবে ভার্সিটি বাদ দেওয়ার আগে আপনি যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলো জানিয়ে গ্র্যাজুয়েট কোঅরডিনেটরকে মেইল দিতে পারেন। সমাধান হতেও পারে!
এটা তো খুবই সংক্ষিপ্ত আকারের একটি বর্ণনা। আরও ডিটেইলসে জানতে হলে ঘুরে আসুন নোট আর ভিডিও থেকে!