পুষ্টিবিজ্ঞানের (Nutritional Sciences) শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রোফাইল উন্নত করবেন?

যারা পুষ্টিবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় আসতে চান, তারা একটা ব্যাপার মাথায় রাখুন – দিন দিন পুষ্টিবিজ্ঞানের জগতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এই বিষয়ের উপর উচ্চশিক্ষা (মাস্টার্স/পিএইচডি) এখন শুধু পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরাই নেয় না, নেয় চিকিৎসক, নেয় স্নায়ুবিজ্ঞান কিংবা প্রাণরসায়নের ছেলেমেয়েরাও। এমনও দেখা গেছে, পুষ্টি বা খাদ্যবিজ্ঞানে ব্যাচেলর/মাস্টার্স করার সময় ঐ ভার্সিটিরই প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করে ছেলেমেয়েরা সরাসরি মাস্টার্স/পিএইচডিতে ঢুকে যাচ্ছে। ফলে বাইরের আবেদনকারীদের জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে।
.
আবার, ধীরে ধীরে পুষ্টিবিজ্ঞানের সাথে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা একীভূত হয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন Interdepartmental Program. যেমন Purdue University, University of Nebraska-Lincoln, North Carolina State University, Iowa State University-তে এই সুযোগ আছে। Michigan State University-তে Ph.D Dual Major Program (Food Science and Human Nutrition/Environmental Toxicology) আছে। এক্ষেত্রে আপনি একই সাথে দুটো বিষয়ের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করবেন। আবার Saint Louis University-তে Master of Public Health and Master of Science in Nutrition and Dietetics নামে Dual Degree Program আছে। এতে একই সাথে M.P.H./M.S. শেষ করতে পারবেন। এসব Interdepartmental Program-এ বিভিন্ন অনুষদের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। তাই প্রতিযোগিতাটা যে ধীরে ধীরে কড়া হচ্ছে, এতে সন্দেহ নেই। তাই কীভাবে প্রস্তুতি নিলে, কী কৌশল অনুসরণ করলে প্রতিযোগিতায় একটু হলেও এগিয়ে থাকা যাবে, সেটা দেখি চলুন।
.
অতি সাধারণ কিছু কৌশল হলঃ
– সিজিপিএ যতটা সম্ভব ভালো রাখা (বেশিরভাগ ভার্সিটিতে মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট ৩.০০ হলেও সিজিপিএ যত বেশি হবে, প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা তত সহজ হবে)
– জিআরই আর ল্যাংগুয়েজ টেস্টে ভালো স্কোর তোলা
.
এগুলোর পাশাপাশি যেসব কাজ আপনাকে এগিয়ে রাখতে পারে, সেগুলো নিচে দিলাম। এসব দক্ষতা না থাকলে বা এসব কাজ না করলে যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ একদমই পাবেন না, তা না। তবে এগুলো আপনাকে বাড়তি সুবিধা দেবে। এখনকার চরম প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এটাই দরকার।
.
১) প্রয়োজনীয় কিছু সফটওয়্যারের কাজ শিখে রাখা। যেমন, SPSS, SAS, R । SPSS হয়ত অনার্স/মাস্টার্সের গবেষণায় ব্যবহার করেছেন, কিন্তু ঠিকমত শিখেছেন তো? শেখাটাই আসল। একইভাবে SAS এবং R-এর উপর দখল থাকলে (জবরদস্ত না হলেও চলবে) সেটা প্লাস পয়েন্ট হবে। কারণ এসব সফটওয়্যার থিসিস বেইজড মাস্টার্স/পিএইচডির সময় লাগবে।
.
২) পেপার পাব্লিশ করা (একটা হলেও)। আপনি পুষ্টিবিজ্ঞানে থাকতে চান, বা পুষ্টিবিজ্ঞান থেকে সুইচ করে পাবলিক হেলথে (গণস্বাস্থ্য) যেতে চান, সবক্ষেত্রেই পাব্লিশড পেপার থাকা জরুরী। গণস্বাস্থ্যের অন্যান্য শাখার কথা বলতে পারছি না, কিন্তু যদি এপিডেমিওলজিতে (রোগতত্ত্ব) পড়তে চান, কমপক্ষে তিনটা পেপার পাব্লিশড থাকলে আপনি প্রতিযোগিতার লাইনে থাকবেন। নতুবা ছিটকে যাবেন। এসব পেপার হতে পারে রিভিউ পেপার (এটা কী জিনিস, সেটা সম্পর্কে জানতে পারবেন নিচের লিংক থেকে)।
.
পড়াশোনা শেষে পুষ্টি সংক্রান্ত চাকরিতে ঢুকতে পারলে তো ভালোই, না পারলেও বেকার অবস্থাটাকে কাজে লাগিয়ে মানসম্মত রিভিউ পেপার লেখার উদ্যোগ নিয়ে ফেলুন। আপনার যে বিষয়ের উপর গবেষণা করার ইচ্ছা, ঐ বিষয়ের উপর। এতে করে আবেদন পাকাপোক্ত হবে।
.
৩) বিভিন্ন সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ লুফে নেওয়া। আইসিডিডিআর,বি, ব্র্যাক, কেয়ার বাংলাদেশ বা এই ধরনের প্রতিষ্ঠান যারা গণস্বাস্থ্য/পুষ্টি নিয়ে কাজ করে এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেয়, তাদের থেকে এই সুযোগ নেওয়া উচিৎ। টাকাপয়সা হয়ত পাবেন না, উল্টো দিতে হতে পারে। কিন্তু ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা থাকলে সেটা পাবলিক হেলথ/নিউট্রিশনের উচ্চশিক্ষার জন্য বাড়তি পয়েন্ট দিবে।
.
৪) যে সুপারভাইজরের অধীনে আন্ডারগ্র্যাড বা মাস্টার্সের থিসিস করেছেন, পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বের হবার পর উনাদের কোনো গবেষণার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারেন কিনা, খোঁজ নিন। অথবা উনাদের মাধ্যমে অন্য কারো গবেষণার সাথে যুক্ত হওয়া। মোট কথা, গবেষণার অভিজ্ঞতা ভারী করা।
.
৫) পড়াশোনা চলাকালে ল্যাবরেটরির কাজগুলো খুব ভালভাবে শিখে ফেলা। কোষ বা প্রাণী সংক্রান্ত জটিল প্রক্রিয়া ল্যাবে শেখানো না হলেও অল্পকিছু যাই শেখানো হয় (ক্রোমাটোগ্রাফি, পুষ্টি উপাদান পৃথকীকরণ, ইত্যাদি), ভালমত শিখে ফেলুন। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
.
৬) কোয়েশ্চেনিয়ার/সার্ভে (Questionnaire/Survey) তৈরি করার কাজে যুক্ত হতে পারেন কিনা, দেখুন। এর validity, reliability পরীক্ষা করে কীভাবে, এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞতা থাকলে অনেক ভালো।
.
৭) Qualtrics, SurveyMonkey, Google Forms, ইত্যাদি সফটওয়্যারের সাথে জানাশোনা থাকা ভালো। এগুলো দিয়ে চট করে সার্ভে তৈরি করা যায়।
.
রিভিউ পেপারের সাধারণ ধারণাঃ http://websites.uwlax.edu/biology/ReviewPapers.html

মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।