একটি অনুপ্রেরণামূলক পোস্ট_মাইকেল আইনের গল্প

আমরা যারা উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করছি, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতিবাচক উত্তর পেয়েছি। প্রফেসররা নেগেটিভ রিপ্লাই দিয়েছেন, অ্যাডমিশন অফিস থেকে রিজেকটেড হওয়ার মেইল এসেছে। কিন্তু কতবার রিজেকটেড হয়েছেন? ৬-৭ বার? বড়জোর ১০ বার? কিন্তু এক্ষেত্রে হতাশ হয়ে হাল ছাড়ার আগে শুনে নিন একজন যোদ্ধার কাহিনী। নাম তাঁর মাইকেল এইন, যিনি ২০ জায়গায় এপ্লাই করে বিশ জায়গা থেকেই রিজেক্টেড হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ হাসি হেসেছিলেন তিনিই।

মাইকেল একজন বামন। চার ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার মাইকেলের ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। আইভি লীগ খ্যাত ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ঠিক করেন ডাক্তার হবেন। এজন্য এখান থেকে তিনি গণিতে মেজর করেন, ফিজিওলজি ল্যাবে গবেষণা করেন এবং MCAT-এ ভালো স্কোর তুলেন। এরপর দেশ জুড়ে প্রায় বিশ/ত্রিশটির মতো মেডিক্যাল স্কুলে আবেদন করেন। এর মধ্যে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। আবেদনের সাথে যে ব্যক্তিগত চিঠি পাঠাতে হয়, সেখানে তিনি উল্লেখ করে দেন, তিনি একজন বামন।

নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী মাইকেল ভেবেছিলেন, তাঁর পক্ষে মেডিক্যাল স্কুলে সুযোগ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ক্রমশই সে চিন্তা ফিকে হতে লাগলো। অনেকগুলো অ্যাডমিশন ইন্টার্ভিউয়ে তাঁকে বলা হল, তাঁর উচ্চতা ডাক্তারি পড়ার জন্য উপযুক্ত নয়। ফলে তাঁকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব না।

এরপর এক এক করে সবগুলো আবেদনের বিপক্ষেই রিজেকশন লেটার এলো। এই রিজেকশন যে তাঁর উচ্চতার কারণে, এটা বুঝতে বেগ পেতে হল না।

মাইকেল রেগে গেলেন, তাঁর জেদ চেপে গেলো। এমন একটা অবস্থার জন্য তাঁকে রিজেক্ট করা হচ্ছিলো, যার উপর তাঁর কোনো হাত নেই! ফলে তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরের বছর আবার ব্রাউনে ফিরে এলেন। এবার নিজেকে মেডিক্যাল স্কুলের জন্য প্রস্তুত করলেন আরও দুটো সায়েন্স কোর্স নিয়ে, সাথে চালাতে লাগলেন গবেষণা, পাবলিশ করলেন পেপার। এরপর আবারও এপ্লাই করলেন বিশটির মতো স্কুলে। আবারও রিজেকশন লেটার আসতে লাগলো। তবে… এবার এক্সেপ্টেন্স অফার নিয়ে এলো অ্যালবানী মেডিক্যাল স্কুল!

অ্যালবানী থেকে পড়া শেষ করে মাইকেল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরভিনে পেডিয়াট্রিক রেসিডেন্সিতে যোগ দেন। এরপর তিনি জন্স হপকিন্সে অর্থোপেডিক সার্জারির উপর একটা ফেলোশিপের জন্য আবেদন করেন। এবার কিন্তু হপকিন্স তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারে নি। সাদরে গ্রহণ করেছে এবং বলেছে, মাইকেল তাদের ফেলোশিপের জন্য একজন যোগ্য ক্যান্ডিডেট!

মাইকেল অনেকদিন ধরে সেই রিজেকশন লেটারগুলো জমিয়ে রেখেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন প্রতিটা স্কুলে পাল্টা উত্তর দেবেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাঁর রাগ ফিকে হয়েছে। এখন আর তাঁকে উত্তর দিয়ে বোঝাতে হবে না। এখন তাঁর কাজ দেখেই সবাই জেনে গেছে মাইকেল এই উচ্চতা নিয়ে কী করতে সক্ষম!

তো হতাশায় ভুগতে থাকা পাঠকদের বলছি – মাইকেল এমন একটা কারণে রিজেক্টেড হয়েছিলেন যেটা পুষিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। কিন্তু আমরা রিজেক্টেড হই লেখাপড়া সংক্রান্ত বিষয়ের জন্যে। আর এসব খামতি পুষিয়ে নেওয়ার মতো ক্ষমতাও আমাদের আছে। তাই চলুন ভেঙ্গে না পড়ে, হাল ছেড়ে না দিয়ে নিজেকে ইম্প্রুভ করার চেষ্টা করি। মাইকেলের মতোই নিজের প্রোফাইলটা আরও ভারী করি যেন উনিশটা বিশ্ববিদ্যালয় রিজেক্ট করলেও একটা থেকে ফুল ফান্ডসহ অফার লেটার আসে।

মূল লেখাটা পাবেন এখানে

মন্তব্য

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।