যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারি, USMLE, এবং রেসিডেন্সির নানা ধাপ – রাগিব হাসান

অরিজিনাল পোস্ট – রাগিব হাসান (লেখকের অনুমতি সাপেক্ষেই পাবলিশ করা হলো)

বিদেশে বাংলাদেশের প্রচুর প্রকৌশলী কাজ করেন, তবে ডাক্তারেরা তুলনামূলকভাবে অনেক কম আসেন। বিশেষ করে আমেরিকায় ডাক্তারদের আসাটা অনেক কঠিন। কারণ প্রকৌশলীরা যেমন মাস্টার্স বা পিএইচডিতে ভর্তি হয়ে গ্রাজুয়েট স্টাডি করতে পারেন, ডাক্তারদের রাস্তাটা সেরকম না। তবে তার পরেও ভারত বা পাকিস্তান থেকে প্রচুর ডাক্তার ঠিকই আসছে, সেই তুলনায় বাংলাদেশের ডাক্তারেরা অনেক কম আসেন। কারণটা মূলত তথ্যের অভাব।

আজকের এই লেখায় খুব সংক্ষেপে ডাক্তারদের জন্য আমেরিকায় পড়াশোনা বা রেসিডেন্সি পাবার ও আমেরিকার ডাক্তার হিসাবে সবীকৃতি পাওয়ার পদ্ধতিটা সম্পর্কে লিখবো।

(আমি নিজে ডাক্তার নই, তবে আমার স্ত্রী ডাঃ Jaria Afrin Chowdhury ডাক্তার বলে আমি মনে হয় আধা ডাক্তার! যাহোক, গত কয়েক বছরে আমেরিকায় ডাক্তার হিসাবে কাজ করার পুরো পদ্ধতি নিজের চোখে দেখার পরে এই ব্যাপারে কিছুটা আইডিয়া পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে অনেক মেডিকেল শিক্ষার্থী এই ব্যাপারে সাহায্য চেয়ে জারিয়াকে মেসেজ দেয়। বেচারা রেসিডেন্সির কাজের চাপে জবাব দেয়ার সময় পায়না বলে আমাকে অনুরোধ করেছে ওর কাছ থেকে শুনে এটা লিখতে।)

বাংলাদেশের মেডিকেল ডিগ্রি আমেরিকায় আধা স্বীকৃত। আধা কারণ হলো মেডিকেল কলেজ অনেকগুলাই আমেরিকার Educational Council for Foreign Medical Graduates (ECFMG) দ্বারা স্বীকৃত। তবে, বাংলাদেশের ডাক্তারেরা সরাসরি আমেরিকায় প্রাকটিস করতে পারেন না। এখানে প্রাকটিস করতে হলে প্রথমে United States Medical Licensing Examination (USMLE) পরীক্ষা পাস করতে হয়। তার পর এখানকার কোনো হাসপাতালের রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে ৩ থেকে ৪ বছরের রেসিডেন্সি করতে হয়।

বাংলাদেশের যত বাঘা ডিগ্রিই থাকুক না কেনো, এই দুইটা কাজ করতেই হবে। এমনকি ব্রিটিশ সিস্টেমের ডিগ্রি যেমন MRCP, FRCS বা এরকম যাই থাকুক না কেনো, এবং যত বছরের অভিজ্ঞতাই থাকুক না কেনো, USMLE পাস করা ও রেসিডেন্সি করাটা বাধ্যতামূলক।

আমেরিকায় সব ডাক্তারকে (এমনকি যারা এখানে ডাক্তারি পড়েছে তাদেরকেও) এই ধাপগুলা পেরুতে হয়। ইউরোপের/অস্ট্রেলিয়ার বা দেশের-বিদেশের হাজার ডিগ্রি থাকলেও কোনো ছাড় নাই।

USMLE পরীক্ষাটা ডাক্তারদের চিকিৎসা বিষয়ের জ্ঞান এবং ব্যবহারিক দক্ষতার পরীক্ষা। USMLE এর মোট পরীক্ষা ৪টা। – USMLE Step 1- USMLE Step 2 CK- USMLE Step 2 CS- USMLE Step 3

এর মধ্যে USMLE Step 2 CS হলো ব্যবহারিক পরীক্ষা। বাকিগুলা MCQ।

MCQ পরীক্ষাগুলা দিতে হয় Prometric Center এ। আর স্টেপ ২ CS দিতে হয় আমেরিকার ৫টা শহরের কোনো একটায় (শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, হিউস্টন, আটলান্টা, লস এঞ্জেলেস)।

(বাংলাদেশের কাছে দেখলাম ভারতের কলকাতায় গিয়ে স্টেপ ১ এবং স্টেপ ২ CK দেয়া যায়। )

পরীক্ষাগুলা অত্যন্ত কঠিন। আমি নিজে পিএইচডিসহ নানা সময়ে যা পরীক্ষা দিয়েছি, কোথাও এমন কঠিন পরীক্ষা দেখিনি। পাস মার্ক হলো ৭৫ (Two digit score) অর্থাৎ ১৯২ (৩০০ এর মধ্যে)। কিন্তু পাস মার্কের ধারে কাছে পেলে মানে কম স্কোর হলে একেবারেই লাভ নাই, রেসিডেন্সি মিলবেনা। আর আরো ভয়ঙ্কর কথা হলো কম নম্বর পেয়ে পাস করে ফেললে টোফেল বা জিআরই এর মতো রিটেইক করা যায় না। একবার পরীক্ষা পাস করলে পরের ৭ বছরের মধ্যে আবার দেয়া যায় না!! (কাজেই কম পেয়ে পাসের চাইতে ফেল করা ভালো)। আবার একাধিক বারে পাস করলে সেটাও রেসিডেন্সি পেতে সমস্যা করে।

USMLE এর পুলসিরাত পেরুতে পারলে হাতে মিলে ECFMG এর MD সার্টিফিকেট। (স্টেপ ৩ বাদে বাকিগুলা পাস করলেই এটা দেয়)। পরের ধাপ হলো রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করা। সেটা আরেক এভারেস্ট জয়ের মতো কাজ।

আমেরিকার সব মেডিকাল প্রোগ্রাম কেন্দ্রীয়ভাবে আবেদন নেয়। সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হয়। রেকমেন্ডেশন লেটার লাগে ৪/৫টা। আর প্রচুর খরচ করে আবেদন করতে হয় একেক প্রোগ্রামে, লিখতে হয় পার্সোনাল স্টেটমেন্ট নামের একটা রচনা।

আবেদন করার পর (এবং ফি দিতে দিতে সর্বসান্ত হওয়ার পরে) অপেক্ষার পালা। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারভিউ সিজন। সেসময়ে যদি ভাগ্যে শিকা ছিড়ে, তাহলে ইন্টারভিউ এর ডাক মিলবে। নিজের খরচে সেখানে গিয়ে সরাসরি ১ দিন ধরে ইন্টারভিউ দিতে হবে।

কিন্তু এই ইন্টারভিউ এর ডাক পাওয়াটা আরেক বেসম্ভব ব্যাপার। কারণ অধিকাংশ প্রোগ্রামেই হয় (১) বিদেশি গ্রাজুয়েট নিবে না, বা (২) ৫ বছরের বেশি আগে পাস করা কাউকে নিবে না।

বাংলাদেশের একজন ডাক্তার পাস করার পরে USMLE দিয়ে সারতে সারতে আসলে ৫ বছর শেষ হয়েই যায়। কাজেই খুব অল্প যেসব প্রোগ্রামে ৫ বছর আগের এবং বিদেশী গ্রাজুয়েটদের নেয়, সেখানেই সুযোগ মিললেও মিলতে পারে।

ইন্টারভিউ পাওয়াটাও যে কতটা কঠিন, উদাহরণ দেই – UAB এর Psychiatry প্রোগ্রাম, যেখানে জারিয়া এখন রেসিডেন্সি করছে, সেখানে আসন আছে ৯টি। তার জন্য ১০০০ জনের বেশি আবেদন করে। ইন্টারভিউ পায় বড়জোর ১০০ জন। আর তা থেকে নেয়া হয় ৯ জন।

ইন্টারভিউ যদি মিলে, তার পরে ফেব্রুয়ারি-মার্চে হয় আরেক ধাপ, Match। ডাক্তারেরা নিজেরা যেখানে ইন্টারভিউ দিয়েছেন, তার একটা রাংকিং করেন। কোনটা ১ম পছন্দ, কোনটা ২য়, এরকম। আর প্রত্যেক হাসপাতালেও এভাবে আবেদনকারীদের র‍্যাংকিং করে, কাকে ১ম পছন্দ এরকম। এই দুই তালিকা মিলে একটা match algorithm চালিয়ে ম্যাচ হয় নাকি দেখা হয়।

যদি এই সব পুলসিরাত পেরোনো হয়, তাহলে মিলে রেসিডেন্সি, জুলাই ১ থেকে শুরু হয়। ৩ থেকে ৪ বছর দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ দিন হাড়ভাঙা খাটুনি করে তার পর মিলে ডাক্তার হিসাবে স্বীকৃতি।

পুরা ব্যাপারটায় আর্থিক সঙ্গতি থাকাটা অনেক জরুরি। USMLE এর কোচিং করা যায়, কিন্তু সেটার খরচ পরীক্ষা প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার ডলার। আর পরীক্ষার ফী ৭০০ থেকে ১২০০ ডলার (এখন আরো বাড়তেও পারে)। রেসিডেন্সি এপ্লিকেশন অন্তত ১০০টা হাসপাতালে করতে হয়, তার খরচ প্রায় হাজার খানেক ডলারের উপরে।

আর টাকার চাইতেও মানসিক চাপটা অনেক ভয়াবহ। প্রবাসের বাংলাদেশী সমাজ এবং অন্যান্য বিষয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা মেডিকাল স্টাডিজ আর পরীক্ষার ব্যাপারগুলা কিছুই বুঝেন না, ফলে তারা ডাক্তারদের ব্যাপক মানসিক পেইন দেন। আর এই ভয়াবহ পরীক্ষাগুলা দেয়ার জন্য খুব শক্ত মানসিক ও শারিরীক শক্তির দরকার হয়। এজন্য আমার পরামর্শ হলো পরীক্ষাগুলা দেয়ার সময়ে বাংলাদেশী বা পরিচিতজন থেকে ১০০ হাত দূরে থেকে ডুব মেরে দেন। খেয়াল রাখবেন, ভালো স্কোরের সুযোগ মাত্র ১ বার।

তবে,

আমেরিকার সমাজে ডাক্তারেরা প্রচণ্ড সম্মানিত। (আয়ের কথা বাদ দিলাম, কিন্তু সম্মানটা অনেক গুণ বেশি, বাংলাদেশে ডাক্তারদের সামাজিক অবস্থান যা, তার চাইতে তো অনেক বেশি বটেই।)। এখানে আম জনতা পর্যন্ত জারিয়া ডাক্তার শুনলে নড়ে চড়ে বসে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে তাকায়।

যাহোক, খুব সংক্ষেপে পুরা প্রসেসটা বলার চেষ্টা করলাম। আদার ব্যাপারি হিসাবে এটুকুই আমার দৌড়। বিস্তারিত জানতে দেখুন

– http://www.ecfmg.org – http://www.usmle.org

দ্বিতীয় পর্ব

অরিজিনাল পোস্ট – রাগিব হাসান

# রেসিডেন্সি

মেডিকাল পড়াশোনার পর রেসিডেন্সি করতে হয় আমেরিকার সব ডাক্তারকে – এখানে বা বাইরে পড়াশোনা করা – সবাইকেই। আমেরিকার কোনো হাসপাতালে রেসিডেন্সি না করলে কেউই এখানে প্রাকটিস করার সুযোগ পান না।

রেসিডেন্সি হয় নির্দিষ্ট কোনো স্পেশালিটিতে। যে যে বিষয়ে স্পেশালাইজ করতে চান, সেই বিষয়েই তাকে রেসিডেন্সি করতে হবে। যেমন ইন্টারনাল মেডিসিন, সাইকিয়াট্রি, ফ্যামিলি মেডিসিন, Ob-Gyn, সার্জারি, ইত্যাদি।

সব হাসপাতালে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম নাই। যেসব হাসপাতালে রেসিডেন্সি আছে, তারা প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক রেসিডেন্ট ডক্টর নেয়। এই নেয়াটা আসলে সারা আমেরিকা জুড়ে কেন্দ্রীয়ভাবে করা হয়, যেটাকে বলা হয় residency match।

রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম দুই রকমের হয় – ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম (কোনো ইউনিভার্সিটির হাসপাতালে), অথবা কমিউনিটি প্রোগ্রাম (ইউনিভার্সিটির না, এমন হাসপাতালে)।

রেসিডেন্সি ৩ থেকে ৪ বছরের হয়, তবে দুই একটা স্পেশালিটিতে ৭ বছর পর্যন্তও হয় (সার্জারি)।

রেসিডেন্সির সময়টাতে বেতন হিসাবে মাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার ডলার দেয়া হয়। তবে পরিশ্রম প্রচন্ড। একজন রেসিডেন্টের সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা সর্বোচ্চ কাজ করার কথা। প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করা লাগে, কোনো কোনো দিন ১৬-১৭ ঘণ্টা হয়। (এখন নিয়ম অনেক “ভালো” হয়ে এরকম হয়েছে, কয়েক বছর আগেও ৩৬ ঘণ্টা টানা কাজ করতে হতো সপ্তাহে একবার)।

ছুটিছাটা নাই। সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ দিন কাজ করা লাগে। বছরে ৩ সপ্তাহ মোট পেইড ছুটি। আর সাপ্তাহিক ছুটি পুরা মাসে হয়তো ৪-৫ দিন মিলবে।

কিন্তু এই রেসিডেন্সি পাওয়াটা ভয়াবহ কঠিন একটা ব্যাপার, বিশেষত বিদেশী ডাক্তারদের জন্য।

এপ্লিকেশন করা লাগে সেপ্টেম্বর ১৫ এর মধ্যে। লেটার অফ রেকমেন্ডেশন লাগে (বিদেশ থেকে নেয়া লেটারের গুরুত্ব অনেক কম, তাই আমেরিকার ডাক্তারদের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন থাকা দরকার)। পার্সোনাল স্টেটমেন্ট লাগে। আর ক্লিনিকাল এক্সপিরিয়েন্স আমেরিকাতে দেখাতে হয়। রেসিডেন্সি এপ্লিকেশন কেন্দ্রীয়ভাবে NRMP এর সাইটে করতে হয়, তবে সেখানেই নানা রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে আলাদা করে এপ্লাই করা লাগে।

ইন্টারভিউ পেতে হলে অন্তত ১০০টার মতো প্রোগ্রামে এপ্লাই করা লাগে। প্রতি স্পেশালিটিতে ৯২ ডলারের মতো দিলে প্রথম ১০টাতে এপ্লাই করা যায়, পরে আরো করতে চাইলে আরো টাকা দিতে হয়। সবকিছু এখন ইলেকট্রনিক, রেকমেন্ডেশন লেটারও স্ক্যান করে আপলোড করতে হয়।

রেসিডেন্সি প্রচন্ড প্রতিযোগিতামূলক। বাংলাদেশ থেকে কেউ ৫ বছরের বেশি আগে মেডিকাল কলেজ থেকে পাস করলে তাদের কপাল মন্দ – প্রায় অধিকাংশ প্রোগ্রামেই ৫ বছরের পুরানো গ্রাজুয়েটদের নিবেনা বলা থাকে। আবার অনেক জায়গায় বিদেশী কাউকে নিবেই না। অথবা ভিসা স্পন্সর করবেনা। কাজেই গ্রিন কার্ড থাকলে অনেক প্রোগ্রামে বেশ সুবিধা হয়। নইলে জে-১ বা এইচ-১ বি ভিসা লাগে, যা অনেক রেসিডেন্সি প্রোগ্রামেই স্পন্সর করতে চায়না বলে ইন্টারভিউতেই ডাকে না।

রেসিডেন্সির কয়েকটা বড় ফ্যাক্টর হলো ক্লিনিকাল এক্সপিরিয়েন্স, রিসার্চ এক্সপিরিয়েন্স, আর রেকমেন্ডেশন। বাংলাদেশী ডাক্তারদের পক্ষে ক্লিনিকাল এক্সপিরিয়েন্স জোগাড় করাটা বেশ কঠিন। এই এক্সপিরিয়েন্সের মধ্যে আছে, Externship, Observership, Shadow ইত্যাদি।

এক্সটার্নশিপ হলো পুরাপুরিভাবে কোনো ডাক্তারের সহকারী হিসাবে হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ, ২-৪ সপ্তাহের জন্য। রোগীর চিকিৎসায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারা যায়। এটা বিদেশীদেরকে দেয়া হয়না বললেই চলে। এখানেই বাংলাদেশী ডাক্তারেরা একটু সমস্যায় পড়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটা করার জন্য হাজার খানেক ডলার ফি দিতে হয়।

অবজারভারশীপ পাওয়া অনেকটা সহজ। এটার মানে হলো ডাক্তারের সাথে ফর্মালি রাউন্ডে ঘুরা, রোগী দেখা বাদে বাকি অনেক কাজ করতে পারা যায়। অনেক হাসপাতালে এটা করার সুযোগ আছে। তবে কানেকশন থাকলে বা ডাক্তারের সাথে সরাসরি পরিচয় থাকলে এটা সহজে পাওয়া সম্ভব।

শ্যাডো করা অনেকটা ডাক্তারের পেছন পেছন ঘোরার মতো। ইনফর্মালি এটা অনেকে করে থাকেন। এইগুলার খুব বড় গুরুত্ব আছে। যতো বেশি এরকম অভিজ্ঞতা সিভিতে দেখানো যাবে, ততো বাড়বে সুযোগ। গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকলে সেটাও খুব কাজে লাগে। এজন্য পেপার পাবলিকেশন থাকতে হবে।

রেসিডেন্সির প্রতিযোগিতা প্রচন্ড বেশি, সারা বিশ্বের প্রচুর ডাক্তার এখন আমেরিকাতে আসতে চান। আর স্থানীয় মেডিকাল স্টুডেন্ট তো আছেই। আমেরিকার রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে এদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। বিদেশীরা পরে। ২৫ হাজার মোট পজিশনের জন্য ৪০ হাজার জন এপ্লাই করে। বিদেশীরা কয়েক বছর এপ্লাই করে হয়তো একবার সুযোগ পায়, তাও হয়তো আমেরিকার উল্টা দিকের কোনো জায়গায়। ২০১৪ সালের হিসাবে আমেরিকান গ্রাজুয়েটরা ৭৫% প্রথম চেষ্টাতেই রেসিডেন্সি পায়, যেখানে বিদেশীরা কয়েক বছর চেষ্টা করে ৪৮% ক্ষেত্রে রেসিডেন্সি পায়।

একেক প্রোগ্রামে এপ্লাই করে হাজার কয়েক ডাক্তার। জারিয়ার সাইকিয়াট্রি প্রোগ্রামে ১০০০+ জন এপ্লাই করেছিলো, ইন্টারভিউতে ডেকেছে ১০০ জন, আর নিয়েছে ৯ জন। কাজেই বুঝতেই পারছেন কী রকম প্রতিযোগিতা।

আর ইন্টারভিউ পেলেও আরেক খরচের ব্যাপার। যাতায়াত, থাকার সব খরচ নিজের। তাই সারা দেশের নানা জায়গায় ঘুরে যেতে কয়েক হাজার ডলার খরচ হবে এসময়।

ইন্টারভিউতে যারা আসে তারা সবাই বাঘা বাঘা ডাক্তার। কাজেই অনেক ভিতরের ফ্যাক্টর কাজ করে। যেমন রেকমেন্ডেশন কোথা থেকে, এই হাসপাতালেই কাজ করেছে কি না, অথবা আগে থেকে জানাশোনা আছে কি না। বুঝেনই তো!! এই সুযোগেই আসলে পাকিস্তানী বা ভারতীয় ডাক্তারেরা এগিয়ে যায়, কারণ ওদের দেশের ডাক্তার পুরা আমেরিকাতে ভর্তি।

ম্যাচ প্রসেস করা হয় একটা এলগরিদমের মাধ্যমে, এপ্লিকেন্টের পছন্দ আর প্রোগ্রামের পছন্দের ক্রমকে আমলে নিয়ে বেস্ট ম্যাচ বের করা হয় (এই এলগরিদম আবার গত বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছে অর্থনীতিতে!!)।

মার্চ মাসের ২য় সপ্তাহে রেজাল্ট দেয়। যারা ম্যাচ হয়, তাদের জানানো হয় কোন প্রোগ্রামে তাদের চান্স হয়েছে। একটাই ম্যাচ, এবং সেখানে সবাই যেতে বাধ্য।

** আপনি ডাক্তার হয়ে থাকলে দয়া করে পরিচিতদের কাছে লেখাটা শেয়ার করুন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মেডিকাল স্টুডেন্ট এই ব্যাপারে কিছুই জানে না বা কীভাবে শুরু করতে হবে, তাও জানে না।

মন্তব্য

3 comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।